সোমবার, ৩ জানুয়ারী, ২০২২

বয়স ৫০ পেরোলে খাদ্যাভ্যাসে কোন কোন পরিবর্তন আনতে হবে ?.


বয়স ৫০ পেরোলে খাদ্যাভ্যাসে কোন কোন পরিবর্তন আনতে হবে ?.

 বয়সের সাথে সাথে আমাদের শরীরে যেমন পরিবর্তন আসে, তেমনি আমাদের খাবার প্লেটেও পরিবর্তন আনা উচিৎ। হয়তো আপনি ২০-৩০ বছর বয়সে সবসময় নিশ্চিন্তে রসগোল্লা বা আইস ক্রিম খেতেন, কিন্তু এখন আপনাকে এদিকে মনোযোগ দিতে হবে। অতিরিক্ত চিনি আপনার ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াবে। আপনার যদি এমন কোন স্বাস্থ্য সমস্যা ধরা পড়ে যাতে আপনার খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন তাহলে সেটা আপনাকে অবশ্যই পালন করতে হবে। না হলে এই সমস্যা আরও ভয়াবহ হতে পারে।

আপনার ডাক্তার যদি আপনাকে আপনার খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের ব্যাপারে কিছু না বলে থাকে তবুও আপনার উচিৎ হবে নিজে থেকেই কিছু পরিবর্তন আনা। এখানে আমি আপনাকে বলছি বয়স পঞ্চাশ পেরোলে আপনার খাদ্যাভ্যাসে কি কি পরিবর্তন আনতে হবে।

১। বেশী বেশী জটিল শর্করা খেতে হবে-

জটিল শর্করা খাবার পর তা ভেঙ্গে ধীর গতিতে শরীরে মিশে। ফলে ব্লাড সুগার হঠাৎ বেড়ে যায় না। জটিল শর্করা বা কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট যেসব খাবারে আছেঃ বাদামি চাল, ওট, কিনোয়া, ডাল, ব্ল্যাক বিন, কিডনি বিন, মিষ্টি আলু, ব্রকলি, গাজর, আপেল, কমলা, কিউই, ইত্যাদি। গোটা শস্যের খাবার হার্ট ভাল রাখে, এবং শরীর ও মস্তিষ্কে শক্তি দেয়। এসব খাবারে ফাইবার থাকার ফলে এগুলি খেলে অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকে এবং কোষ্ঠাকাঠিন্য দূর হয়।

২। নিয়মিত মাছ খান-

বয়স বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, আলযহাইমার্স রোগ ইত্যাদির ঝুঁকি বাড়ে। নিয়মিত ওমেগা-৩ যুক্ত খাবার খেলে শরীরের প্রদাহ কমে এবং শরীর সুস্থ থাকে। ওমেগা-৩ প্রচুর পরিমাণে পাবেন তৈলাক্ত মাছে (ইলিশ, পাঙ্গাস, পাবদা) ও সামুদ্রিক মাছে (টুনা, স্যামন, সার্ডিন)। সপ্তাহে ২-৩ দিন মাছ খাওয়ার অভ্যাস করুন। ওমেগা-৩ আরও পাবেন আখরোট, চিয়া সিড, এবং তিসির বীজে।

৩। লবণ খাওয়া কমান-

অতিরিক্ত লবণ হৃদরোগ ও হাই ব্লাড প্রেশারের ঝুঁকি বাড়ায়। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ দিনে ২,৩০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম খেতে পারেন, কিন্তু বয়স পঞ্চাশ পেরোলে তা হয়ে যায় দিনে ১,৫০০ মিলিগ্রাম। লবণের পরিবর্তে রান্নায় বিভিন্ন ভেষজ ব্যবহার করুন এবং টেবিলের লবণ দানি সরিয়ে ফেলুন।

৪। উচ্চ মাত্রার প্রোটিনযুক্ত খাবার খান-

প্রোটিন সব বয়সের মানুষের জন্যি অপরিহার্য, তবে ৬০ বছর বা তার বেশী যাদের বয়স তাদের উচিৎ আরও বেশী বেশী প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়া। বয়স বেড়ে গেলে পেশীর শক্তির জন্য প্রয়োজন হয় প্রোটিনের এবং শরীর আগের মত প্রোটিনের সাহায্যে পেশী বৃদ্ধি করতে পারে না। তবে খেতে হবে চর্বিহীন প্রোটিন যেমন স্টেক, মাছ, মুরগীর সিনা, এবং টার্কি। এছাড়া ডাল, কিনোয়া, ইত্যদিতেও পাবেন উদ্ভিজ্জ প্রোটিন।

 ৫। বাসায় খাবার খান -

চেষ্টা করবেন বাইরের খাবার কম খেতে এবং বেশী সময় বাসায় রান্না করা খাবার খেতে। এতে আপনি আপনার খাবারের লবণ, চিনি, ইত্যাদির দিকে মনোযোগ দিতে পারবেন এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাবেন। অন্যদিকে রেস্টুরেন্টের খাবার সব সময়ই অস্বাস্থ্যকর। এমনকি দামি রেস্টুরেন্টের খাবারও বাড়িতে তৈরি খাবারের মত মানসম্মত ও স্বাস্থ্যকর নয়। 

৬। উচ্চ মাত্রার ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার খান-

বয়সের সাথে সাথে হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস পেতে থাকে, তাই আপনার প্রয়োজন ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়া। এসব খাবার আপনার হাড় শক্ত ও মজবুত রাখবে, অস্টিওপরোসিস রোগ থেকে দূরে রাখবে এবং সহজেই হাড় ফেটে যাওয়া রোধ করবে। যেসব খাবারে বেশী ক্যালসিয়াম পাবেন – দুধ, পনির, দই, বিন, ডাল, কাঠবাদাম।

৭। কোমল পানীয় বর্জন করুন -

কোমল পানীয়কে না বলুন। কোক, পেপসি, স্প্রাইট, ইত্যাদির পরিবর্তে জল এবং চিনি ছাড়া চা বা গ্রিন টি খাওয়ার অভ্যাস করুন। হাতের কাছে সব সময় জলের বোতল রাখুন এবং বেশী বেশী জল পান করার অভ্যাস করুন।

৮। রঙ্গিন খাবার-

প্লেট ভর্তি করুন বিভিন্ন রঙের খাবার দিয়ে। এই বয়সে আপনার দরকার বেশী বেশী শাক সবজি, ফল মূল খাওয়া। প্লেটে রাখুন সবুজ, কমলা, লাল, বেগুনি, ইত্যাদি রঙের খাবার। মিষ্টি আলু, সবুজ শাক, ব্রকলি, বিভিন্ন রঙের ক্যাপসিকাম, তরমুজ, বাঙ্গি, বেগুন, বিট, ইত্যাদি খাবারে আছে অকাল বার্ধক্য রোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় এন্টিঅক্সিডেন্ট।

৯। ক্ষুধা লাগলেই খাবার খাবেন-

যদিও আপনার উচিৎ হবে না সারাদিন ভর খাওয়া দাওয়া করা, তবুও আপনার ক্ষুধার দিকে মনোযোগ দিতে হবে এবং ক্ষুধা লাগলে খেতে হবে। এর ফলে শুধু আপনার ক্ষুধাই মিটবে না, আপনার মেটাবলিজমও বৃদ্ধি পাবে। বয়সের সাথে সাথে শরীরের ক্যালরি খরচ কমে যায়। 

১০। প্রক্রিয়াজাত খাবারকে না বলুন

প্রক্রিয়াজাত খাবার হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। বার্গার, সসেজ, স্যান্ডুইচের মাংস, ইত্যাদি খেতে সুস্বাদু হলেও এসব প্রক্রিয়াজাত মাংসে প্রচুর কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এবং এতে আছে অতিরিক্ত লবণ, চিনি ও ক্যালরি। খাদ্য তালিকায় রাখুন ফল মূল, শাক সবজি, চর্বিহীন মাংস, মাছ এবং গোটা শস্য। 

আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে আপনার প্রয়োজন অনুসারে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।

0 Post a Comment:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন