শুক্রবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২১

নিয়মিত আনারস খেলে কোন কোন রোগ সারে ?.


নিয়মিত আনারস খেলে যেসব রোগ সারে ।


  আনারসে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন আছে। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এ ছাড়াও আনারসে আছে নানা ধরনের পুষ্টিগুণ। যা একাধিক স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে বাঁচাতে পারে। বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় এই ফলটি সারাবছরই কমবেশি পাওয়া যায়।

  বিশেষজ্ঞদের মতে, আনারসে আছে একাধিক স্বাস্থ্য উপকারিতা। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস এবং অন্যান্য সহায়ক যৌগগুলো শরীরের বিভিন্ন প্রদাহ এবং রোগের সঙ্গে লড়াই করতে পারে। এ ছাড়াও হজমশক্তি বাড়ায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং যেকোনো সার্জারি থেকে সুস্থ হয়ে উঠতে সাহায্য করে।

  এক কাপ আনারসে ক্যালোরি ৮২.৫, ফ্যাট ১.৭ গ্রাম, প্রোটিন ১ গ্রাম, কার্বস ২১.৬ গ্রাম, ফাইবার ২.৩ গ্রাম, ভিটামিন সি আরডিআইয়ের ১৩১ শতাংশ, ম্যাঙ্গানিজ আরডিআইয়ের ৭৬ শতাংশ, ভিটামিন বি-৬ আরডিআইয়ের ৯ শতাংশ, তামা আরডিআইয়ের ৯ শতাংশ, থায়ামিন আরডিআইয়ের ৯ শতাংশ, ফোলেট আরডিআইয়ের ৭ শতাংশ, পটাশিয়াম আরডিআইয়ের ৫ শতাংশ থাকে।

  আরও আছে ম্যাগনেসিয়াম আরডিআইয়ের ৫ শতাংশ, নায়াসিন আরডিআইয়ের ৪ শতাংশ, পেন্টোথেনিক অ্যাসিড আরডিআইয়ের ৪ শতাংশ, রিবোফ্লাভিন আরডিআইয়ের ৩ শতাংশ, আয়রন আরডিআইয়ের ৩ শতাংশসহ ভিটামিন এ এবং কে, ফসফরাস, দস্তা এবং ক্যালসিয়াম। প্রতিদিনের শরীরের চাহিদা অনুযায়ী ভিটামিন সি ১৩১ শতাংশ এবং ম্যাঙ্গানিজের ৭৬ শতাংশ সরবরাহ করে আনারস।

 জেনে নিন আনারসের উপকারিতাসমূহ-

১. রোগের সঙ্গে লড়াই করে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট

আনারস কেবল পুষ্টিতেই সমৃদ্ধ নয়, এতে স্বাস্থ্যকর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভরপুর থাকে। আনারসে ফ্ল্যাভোনয়েডস এবং ফেনলিক অ্যাসিড নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গ্রহণের ফলে শরীরে থাকা ফ্রি র্যাডিকেলস ধ্বংস হয়ে যায়। যা ক্যান্সার ও বিভিন্ন প্রদাহের কারণ হতে পারে।

পুষ্টিবিদদের মতে, আনারস অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের ভালো উৎস। যা হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং কিছু নির্দিষ্ট ক্যান্সারের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।

২. হজমশক্তি বাড়ায়

আনারসে থাকা ব্রোমেলাইন হজমশক্তি উন্নত করে। বিশেষত যাদের অগ্ন্যাশয়ের অপ্রতুলতা আছে তাদের ক্ষেত্রে আনারস খুবই কার্যকরী।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ব্রোমেনেইন ছাড়া হজম এনজাইমগুলো পুরোপুরি ভাঙতে পারে না। অন্যদিকে ব্রোমেলাইনযুক্ত হজম এনজাইমগুলো শক্ত মাংসের প্রোটিনগুলোও ভেঙে ফেলার ক্ষমতা রাখে। এর ফলে হজম আরও ভালো হয়।

৩. ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়

ক্যান্সার একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ, যা অনিয়ন্ত্রিত কোষের বৃদ্ধি দ্বারা ঘটে থাকে। এর অগ্রগতি সাধারণত অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের সঙ্গে যুক্ত। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, আনারস এবং এর যৌগগুলো ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

এই যৌগগুলোর মধ্যে একটি হলো ব্রোমেলাইন নামক হজম এনজাইমের একটি দল। টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় দেখা গেছে, ব্রোমেলাইন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতেও সহায়তা করতে পারে। দুটি টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় দেখা গেছে, ব্রোমেলাইন স্তন ক্যান্সারের কোষের বৃদ্ধি ঠেকাতে এবং ধ্বংস করতে সক্ষম।

অন্যান্য টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় দেখা যায়, ব্রোমেলাইন ত্বক, পিত্ত নালী, গ্যাস্ট্রিক সিস্টেম এবং কোলনসহ অন্যান্য অঞ্চলের ক্যান্সারও দমন করে। টেস্ট-টিউব এবং প্রাণী গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রোমেলাইন ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি দমন করতে এবং ক্যান্সার কোষগুলো নির্মূল করতে সাদা রক্ত কোষকে আরও কার্যকর করে।

৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

বহু শতাব্দী ধরে আনারস ভেষজ ওষুধ হিসেবে চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এতে ব্রোমেলাইনের মতো বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন, খনিজ এবং এনজাইম আছে, যা সম্মিলিতভাবে অনাক্রম্যতা বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং বিভিন্ন প্রদাহকে দমন করতে পারে।

৯ সপ্তাহ ধরে পরিচালিত এক গবেষণায় ৯৮টি শিশুকে নিয়মিত ১৪০-২৮০ গ্রাম আনারস খাওয়ানো হয়। এরপর দেখা যায়, যেসব শিশু আনারস খেয়েছিলেন তাদের ভাইরাল এবং ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কম ছিল। এ ছাড়াও, যে শিশুরা সবচেয়ে বেশি আনারস খেয়েছিল; তাদের অন্যান্য দুটি গ্রুপের তুলনায় প্রায় চারগুণ বেশি রোগ-লড়াইকারী শ্বেত রক্তকণিকা ছিল।

আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, সাইনাস সংক্রমণে আক্রান্ত শিশুরা আনারস খাওয়ার ফলে উল্লেখযোগ্যভাবে দ্রুত সুস্থ হয়েছে। আনারসে থাকা ব্রোমেলাইন বিভিন্ন প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে। এ ছাড়াও আনারসে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন প্রদাহ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় সহায়তা করে।

৫. আর্থ্রাইটিসের সমস্যা কমাবে

বাতের সমস্যায় অনেকেই ভুগে থাকেন। যুক্তরাষ্ট্রে ৫৪ মিলিয়নেরও বেশি প্রাপ্তবয়স্করা আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত। অনেক ধরণের আর্থ্রাইটিস আছে, তবে বেশিরভাগই জয়েন্ট প্রদাহে ভুগে থাকেন। যেহেতু আনারসে ব্রোমেলিন থাকে। আর এতে প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য আছে। তাই সাধারণত ধারণা করা হয়, আর্থ্রাইটিস রোগীদের ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে পারে আনারস।

১৯৬০ সালের প্রথম দিকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রোমেলাইনটি রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের লক্ষণগুলোর উপশম ঘটায়। বেশ কয়েকটি সাম্প্রতিক গবেষণায় বাতের চিকিত্সার জন্য ব্রোমেলিনের কার্যকারিতার প্রমাণ মিলেছে।

অস্টিওআর্থারাইটিসে আক্রান্ত রোগীদের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রোমেলাইনযুক্ত একটি হজম এনজাইম পরিপূরক গ্রহণ ডাইক্লোফেনাক এর মতো সাধারণ বাতের ওষুধের মতো কার্যকরভাবে ব্যথা উপশম করতে সহায়তা করে। আনারসের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যসমূহ সাধারণ বাতের স্বল্পমেয়াদী লক্ষণ থেকে পরিত্রাণ দেয়।

৬. সার্জারির পর দ্রুত সুস্থতা মেলে

সার্জারি বা কঠোর ব্যায়াম করার পর শরীরের ব্যথা থেকে সেরে উঠতে কাজ করে আনারস। এতে থাকা ব্রোমেলিনের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন প্রদাহ থেকে রক্ষা করে।

বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রোমেলাইন প্রদাহ, ফোলাভাব, ক্ষত এবং ব্যথা হ্রাস করতে পারে, যা প্রায়শই সার্জারির পরে ঘটে। এ ছাড়াও কঠোর অনুশীলনের ফলে শরীরের প্রদাহ হলে দ্রুত সারিয়ে তুলতে পারে আনারস। এতে থাকা মেলিনের মতো প্রোটিসগুলো ক্ষতিগ্রস্থ পেশীর প্রদাহ হ্রাস করে।

আজ জাতীয় আনারস দিবস। প্রথম ২০ এপ্রিল ২০১৬ সালে গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল হিসেবে আনারস দিবস পালিত হয়ে আসছে। ১৬৪৮ সালে প্রথম পাইনঅ্যাপল শব্দটি ইংরেজিতে অন্তর্ভুক্ত হয়।

  (আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।)

0 Post a Comment:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন