শিশু মৃ ত্যু র ঝুঁকি কমায় তেল মালিশ -
শিশু মৃ ত্যু র ঝুঁকি কমায় তেল মালিশ -
জন্মের পর নবজাতককে তেল মালিশ করা এই উপমহাদেশে খুবই সাধারণ একটি দৃশ্য। বাড়ির মা-দাদিরা শিশুকে তেল মালিশ করে আসছেন যুগ যুগ ধরে। এবার গবেষণাতেও উঠে এসেছে এই খুব সাধারণ কাজটির উপকারিতার কথা। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি স্কুল অভ মেডিসিনের এক গবেষণায় দেখা গেছে সামান্য তেল মালিশেই শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি কমে আসে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ।
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি স্কুল অভ মেডিসিনের নবজাতক ও উন্নয়নমূলক ওষুধের অধ্যাপক গ্যারি ডার্মস্ট্যাডের নেতৃত্বে একটি দল এই গবেষণা করে। অধ্যাপক ডার্মস্ট্যাড বলেন, 'ত্বক হচ্ছে শরীরের বৃহত্তম অঙ্গ। সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য ত্বকের যত্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু আমরা তা গুরুত্ব দিতে চাই না।’
বাংলাদেশ ও ভারতে ভ্রমণের সময় অধ্যাপক ডার্মস্ট্যাড লক্ষ্য করেন এই অঞ্চলের মা বা বয়োজেষ্ঠ্যরা নবজাতকদের শরীর মালিশের পেছনে বিস্তর সময় ব্যয় করেন। এটা দেখে তিনি এই মালিশ নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ২০০৮ সালে বাংলাদেশের একটি হাসপাতালে দৈনিক মালিশ পাওয়া ৪৯৭টি প্রিটার্ম শিশুদের নিয়ে গবেষণা করে ডার্মস্ট্যাড ও তার সহযোগীরা দেখিয়েছিলেন যে এই প্রাচীন অভ্যাস সত্যিই জীবন বাঁচাতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখলাম মালিশের ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি প্রায় ৪০ শতাংশ কমে যায়। মৃত্যুর ঝুঁকিও প্রায় ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ কমে।’
আলাদা আলাদা ট্রায়ালের মাধ্যমে ডার্মস্ট্যাডের দলটি দেখিয়েছে যে নিয়মিত মালিশ শিশুর মাইক্রোবায়োম তৈরি করতে সাহায্য করে। ডার্মস্ট্যাড বলেন, 'যেসব অপুষ্ট বাচ্চাদের শরীরে তেল মালিশ করা হয়েছিল, তাদের শরীরে অনেক বেশি বৈচিত্র্যময় মাইক্রোবায়োম সৃষ্টি হয়। তেল ওদের ত্বকের মাইক্রোবায়োমের স্তরকে উন্নত করেছে। ফলে ত্বক ভেদ করে রোগজীবাণুর শরীরের ভেতরে প্রবেশ করা কঠিন হয়ে ওঠে।'
মাইক্রোবায়োম হলো ত্বক ও অন্ত্রের বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়ার স্তর। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মাইক্রোবায়োম মূলত রোগের সংক্রমণ ঠেকিয়ে রাখে।
ডার্মস্ট্যাড ও তার দল উত্তর প্রদেশে কেবল ২৬ হাজার নবজাতককে পর্যবেক্ষণ করেছেন। এই দলে সময়মতো জন্ম নেওয়া শিশু যেমন ছিল, তেমনি ছিল নির্দিষ্ট সময়ের আগেই জন্ম নেওয়া শিশুও। ওই শিশুদের অর্ধেককে সূর্যমুখী তেল ও বাকি অর্ধেককে সরিষার তেল দিয়ে মালিশ করা হয়েছিল। গবেষকরা সব শিশুর বৃদ্ধির উন্নতি লক্ষ করেছেন। তারা দেখেছেন, স্বাভাবিক জন্ম নেয়া শিশুদের মৃত্যুহারের ওপর বড় কোনো প্রভাব পড়েনি। তবে সময়ের আগে জন্ম নেওয়া ছোট শিশুদের (যাদের ওজন দেড় কেজির কম) মৃত্যুর ঝুঁকি ৫২ শতাংশ কমে গেছে।
ডার্মস্ট্যাডও পরিমিত চাপে মালিশ করার পরামর্শ দিয়েছেন। খুব বেশি জোরে চাপ দিয়ে মালিশ করলে শিশুর ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
তেলও বাছাই করতে হয় অত্যন্ত সতর্কতার সাথে। উপমহাদেশে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত সর্ষের তেলে ইরিউসিক অ্যাসিক থাকে। যা প্রদাহ ও ত্বকের রোগপ্রতিরোধকারী স্তরের ক্ষতি করতে পারে।
আরো পড়ুন - ডিম কখন খাবেন, ডিম কেন খাবেন ?
২০১৩ সালে দক্ষিণ ভারত ১৯৪টি শিশুর ওপর গবেষণা করা হয়েছিল, যাদের প্রায় সবাইকে তাদের মায়েরা মালিশ করেছিলেন। সেখানে দেখা গেছে, অর্ধেকেরও বেশি মা শিশুর কান ও চোখে তেলের মালিশ করেছেন। গবেষকরা সতর্ক করেছেন যে, এতে সংক্রমণ হতে পারে।
(আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।)
0 Post a Comment:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন