ছোটবেলা থেকেই আপনার সন্তানকে কিভাবে আদর্শবান করে বড় করবেন ?.
ছোটবেলা থেকেই আপনার সন্তানকে কিভাবে আদর্শবান করে বড় করবেন ?.
অনেক মা-বাবাই অ’ভিযোগ করেন যে বাচ্চা প্র’চণ্ড দুষ্টু। কথা শোনে না, জিদ করে, খারাপ জিনিস দ্রুত শেখে। কারো কারো বাচ্চা বেড়াতে গেলে এমন কিছু করে বসে যে মান-সম্মান নিয়ে টানাটানি প’ড়ে যায়। তাছাড়া একটু বড় হলেই বাচ্চার অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়া বা মা’দকাসক্ত হয়ে পড়া নিয়ে আতঙ্কে থাকেন এখন সকল পিতা-মাতাই।
কখনো কি ভেবেছেন যে আপনার শিশু পালন পদ্ধতিতে ভুল থাকতে পারে? কখনো কি ভেবেছেন যে আজকের অতিরিক্ত আদর বা শাসন শিশুর আগামী ধ্বংস করে দিতে পারে? আজকাল অনেক বাচ্চারাই অল্প বয়স থেকেই টাকা কিংবা দামী জিনিসের জন্যে পিতা-মাতাকে চাপ দিয়ে থাকে। মনে রাখবেন, আপনার সন্তান ঠিক সেভাবেই বেড়ে উঠবে যেভাবে আপনি তাঁকে মানুষ করবেন।
নিয়মিত ‘না’ বলুন: সন্তান যা চাইবে, সেটাই দিয়ে দেবেন না। বড় হলে তো না-ই, ছোটবেলাতেও না। অনেক পিতা-মাতাই ছোট শিশুরা যেটা চাইছে কান্না থামাবার জন্য সেটাই হাতে দিয়ে দেন। ফলে মোবাইল ফোন বা ট্যাব সহ সকল বাজে জিনিস হাতে নেয়া তাদের অভ্যাস হয়ে যায়। ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাকে বুঝতে হবে যে চাইলেই সব পাওয়া যায় না, কেঁদে কোন লাভ নেই। ফলে বড় হলেও অযৌক্তিক কোন জিনিস পাবার আশা সন্তানেরা করবে না।
শিষ্ঠাচার শিক্ষা: বাচ্চাকে সমস্ত মানবিক আদব-কায়দা ছোটবেলা থেকেই শেখান। যেমন স্যরি বা থ্যাংক ইউ বলা, অন্যকে সাহায্য করা, কাউকে ব্যাঙ্গ না করা, মিথ্যা না বলা, অন্যের ক্ষতি না করা, গালাগাল না করা ইত্যাদি। কীভাবে শেখাবেন জানেন? আপনার নিজেকেও এসব করার অভ্যাস ক’রতে হবে। শিশুকে শেখান, কিন্তু তার আগে নিজে এসব অভ্যাস ত্যাগ করুন। আপনাকে দেখেই সন্তান খারাপ ও ভালো শেখে।
দান করতে শেখান: যেসব জিনিস আপনার বা বাচ্চাদের এখন লাগছে না, সেগুলো নিয়মিত অন্যদেরকে দিয়ে দিন যাদের প্রয়োজন। আর এই কাজটি সন্তানদের সাথে নিয়েই করুন। এর ফলে ছোটবেলা থেকেই বাচ্চারা শিখবে অন্যদের কত কষ্ট এবং অহেতুক দামী জিনিস কিনে অর্থ অপচয় না করতে। ফলে বড় হয়েও তাঁরা উগ্র সভাবের হয়ে বেড়ে উঠবে না, কারণ ঘরেই আছে সহানুভূতির শিক্ষা।
ভাল মানুষের সাথে সম্পর্ক: কাদের সাথে মেলামেশা করছেন, সেটা খুব খেয়াল রাখুন। যদি এমন সব পরিবারের সাথে মে’লামেশা করেন যারা কিনা বাচ্চাদেরকে সঠিকভাবে মানুষ করছে না, অকারণেই দামী জিনিস কিনে দিচ্ছে, সেক্ষেত্রে আপনার বাচ্চাও দ্রুত এদের দ্বারা প্র’ভাবিত হবে এবং খারাপ জিনিস শিখবে। এমনকি নিজের আত্মীয়স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবের ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হবে। এসব মানুষেরা বাচ্চাদের কোমল মনকে খারাপভাবে প্রভাবিত করে। কোন পারিবারিক বাজে ঘটনাও বাচ্চাদের সামনে আলোচনা করতে নেই।
শি’শুর প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করুন: বাচ্চাদের প্রতি নিজের ভালোবাসা নিয়মিত প্রকাশ করুন। কিন্তু জিনিস কিনে দিয়ে নয়। বরং তাঁদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে। সুন্দর করে কার্ডে লিখে ধন্যবাদ জানাতে পারেন একজন চমৎকার সন্তান হবার জন্য বা কোন ভালো কাজের জন্য। মাঝে মাঝে দিতে পারেন ছোট উপহার। সে খুব ভালো কিছু করলে বিনিময়ে তার আকাঙ্ক্ষিত উপহারও কিনে দেবেন মাঝে মাঝে। কিন্তু সবই করবেন নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী।
চেষ্টা করতে দিন: জীবনের পথে সবাইকেই ঠেকে ঠেকে শিখতে হয়। আপনার বাচ্চাদেরকেও শিখতে হবে। নিজের জীবনের পথে নিজেকে চলে চলে শিখতে দিন। তাঁরা পড়ে যাবে, ব্যথা পাবে, নিজে’রাই আবার উঠে দাঁড়াতে শিখবে। সব পড়ায় দৌড়ে যাবে না ধরতে। বরং তাঁকে পরামর্শ দিন যেন সে উঠে দাঁড়াতে পারে।
অন্যদেরকে বলুন: বাচ্চাদের ঘনি’ষ্ঠ আত্মীয় যেমন দাদা-দাদী, নানা-নানী, খালা, মামা কিংবা চাচা, ফুপিদেরকেও ব্যাপারটি বুঝিয়ে বলুন যে আপনি কীভাবে ওদের মানুষ করতে চান। তাঁদেরকে বলুন যে সঠিক সময়ে আদর করতে, ভুল হলে বুঝিয়ে বলতে, প্রয়োজনে শাসন করতে। টাকা কিংবা জিনিস দিয়ে ভালোবাসা প্রদর্শন করতে, বা তাদের সামনে বাজে আচরণ না করতে অনুরোধ করুন।
শিশুকে বিশ্বাস করুন: তাদের ওপরে আস্থা রাখুন। কোন কারণে বিশ্বাস বা আস্থা না রাখতে পারলেও সেটা তাঁদেরকে বুঝতে দেবেন না। নিয়মিত পকেট মানি দিন অল্প করে এবং সেই টাকা দিয়ে কীভাবে চলতে হবে সেটা শেখান। এতে তার মানি ম্যানেজমেন্ট শেখা হবে এবং সে বুঝতে শিখবে যে টাকা উপার্জন একটি ক’ঠিন কাজ।
নিজের গল্প বলুন: সন্তানদেরকে নিয়মিত নিজের গল্প বলুন। আপনি কীভাবে অর্থ উপার্জন করেন, কীভাবে কষ্ট করতে হয় সেটা তাঁদেরকে জানান। ছোটবেলা থেকেই বুঝতে শেখান যে টাকা খরচ করতে শেখার আগে উপার্জন করা শিখতে হবে।
0 Post a Comment:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন