বুধবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২১

তিল ও তিলের তেলের অজানা সব উপকারিতা গুলি কী কী ?.


তিল ও তিলের তেলের অজানা সব উপকারিতা গুলি কী কী ?.

 আমাদের দেশে তিল দ্বিতীয় প্রধান তেলবীজ ফসল হিসেবে খ্যাত। আর খাদ্য হিসেবে তিল ও তিলের তেল খুবই জনপ্রিয় একটি খাদ্য উপাদান। এটি দেহের পুষ্টির সমস্যা দূর করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই সুস্থ থাকার জন্য তিল ও তিলের তেল কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেই সম্পর্কে আমাদের সকলের জেনে রাখা প্রয়োজন। চলুন তাহলে জেনে নেই তিলের তেলের উপকারিতা সম্পর্কে।

তিলের তেলের উপকারিতাসমূহ :

(১) তিলের তেলের অনেক গুন যদি সকালবেলা এক মুঠো তিল চিবিয়ে খাওয়া হয় তাহলে বল ও পুষ্টি পাওয়া যায়। সেইসাথে দাঁত এতো মজবুত হয়ে যায় যে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত নড়ে না, ব্যথা করে না এবং পড়েও যায় না।

(২) এইভাবে তিল খেলে অর্শের সমস্যা একদমই কমে যায়।

(৩) শিশুদের জন্যও তিল অনেক উপকার। বলা হয়ে থাকে তিলে চুনের মাত্রা বেশি আছে সেই জন্যে বাচ্চাদের জন্যে উপকারী। প্রতিদিন বাচ্চাদের তিলের নাড়– বা তিল পাপড়ি খাওয়ালে বাচ্চারা হৃষ্টপুষ্ট হয়।

(৪) যে সব শিশুরা রাতে বিছানায় প্রস্রাব করে তাদের কালো তিল এবং তার সাথে এক টুকরো মুলো খাওয়ালে ওই বদ-অভ্যাস দূর হয়ে যায়।

(৫) শরীরের পুড়ে যাওয়া জায়গায় তিল পিষে, তার সাথে পানিতে ধোওয়া ঘি ও কর্পূর মিশিয়ে প্রলেপ দিলে খুব দ্রুত আরাম পাওয়া যায়। তিলের তেল গরম করে লাগালেও  আশ্চর্য ভাল ফল পাওয়া যায়।

(৬) যদি শরীরের কোনো অংশ খুব জ্বালা করতে থাকে তাহলে তিল দুধ দিয়ে পিষে প্রলেপ লাগালে দাহ বা জ্বালা দূর হয়ে যাবে।

(৭) যদি টাটকা ক্ষত বা ঘা না সারে তাহলে তিল পিষে নিয়ে মধু আর ঘি মিশিয়ে লাগালে অনেক ওষুধ বা মলমের চেয়ে বেশি কাজ দেবে।

(৮) শূল ব্যথায় শুঁঠ ও হিং মেশানো তিলের তেল মালিশ করলে তাড়াতাড়ি আরাম পাওয়া যায়।

(৯) শীতকালে ফাটা হাত-পা এমনকি গাল বা ঠোঁটেও তিলের তেল লাগালে উপকার হয়।

(১০) রসুন দিয়ে গরম করা তিল তেলের ফোঁটা কানে দিলে কানের ব্যথা সেরে যায়।

(১১) তিল তেলের আর  একটি বিশেষ গুণ এই তেল বাতের ব্যথা অর্থাৎ বাত সারিয়ে দেয়।

(১২)  তিলের তেল সারা শরীরে তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ে এবং তাড়াতাড়ি হজম হয় এবং শরীরকে সুস্থ রাখে।

(১৩) অলিভ অয়েলের চেয়ে তিলের তেলের উপকারিতা বা পুষ্টিগুণ কিছু কম নয়। স্বাদের দিক থেকে বরং অলিভ অয়েলের চেয়ে তিলের তেলই বেশি ভাল।

(১৪) তিল তেল মলকে বদ্ধ করে এবং পুরোনো জমে থাকা মল বাইরে বের করে দেয়। এইভাবে এই তেলের মলরোধ পরস্পর-বিরোধী গুণ রয়েছে।

(১৫) যদি মেয়েদের ঋতুস্রাব ঠিক মতো না হয় এবং খুব ব্যথা-বেদনা হয় তাহলে তিলের তেল খাওয়া উচিত। দু চা চামচ তিল পিষে নিয়ে এক গ্লাস পানিতে ফুটিয়ে নিতে হবে। এক চতুর্থাংশ পানি থেকে গেলে সেই পানিটুকু পান করলে মাসিক ঠিক মতো হবে।

(১৬) তিল, যব, চিনি চূর্ণ করে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে যাঁদের বাচ্চা হবে অর্থাৎ সগর্ভা এবং যাঁদের বাচ্চা হয়েছে অর্থাৎ প্রসূতা বা প্রসূতির রক্তস্রাব বন্ধ হয়।

(১৭) পিষানো কালো তিল এক ভাগ, চিনি দু ভাগ, এবং ছাগলের দুধ চার ভাগ একসাথে মিশিয়ে খেলে রক্ত-আমাশা সারে।

(১৮) অল্প তিল আর চিনি একসাথে পিষে বা কুটে নিয়ে মধু মিশিয়ে চাটালে বাচ্চাদের মল থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়।

(১৯)  তিল, নাগকেসর [কবিরাজি দোকানে পাওয়া যায়] আর চিনির চূর্ণ একসাথে মিশিয়ে খেলে অর্শে উপকার পাওয়া যায়।

(২০) তিল পিষে নিয়ে মাখনের সাথে মিশিয়ে খেলে অর্শে রক্তপড়া ও অর্শের কষ্ট কমে যায়।

(২১) কালো তিল চিবিয়ে খেয়ে তার পরে একটু পানি খেলে দাঁত মজবুত হয়, শরীর হৃষ্টপুষ্ট এবং রক্তস্রাব করা অর্শে আরাম পাওয়া যায়।

(২২) তিলের তেল মুখে দশ পনেরো মিনিট রেখে কুলকুচো করে ফেলে দিলে নড়ে যাওয়া দাঁত মজবুত হয়ে যায় এবং পাইয়োরিয়া [দাঁতের অসুখ] সেরে যায়।

(২৩) দাঁত ব্যথা করলে হিং বা কালোজিরে পিষে নিয়ে তিলের তেল মিশিয়ে তেল গরম করে কুলকুচো করলে আরাম পাওয়া যায়। এই তেল তুলোয় লাগিয়ে মুখে রাখাও যেতে পারে।

(২৪)  হিং, কালো নুন মিশিয়ে গরম করা তিলের তেল পেটে মালিশ করলে বা সেঁক দিলে পেটের ব্যথা সারে এবং গ্যাস কমে যায়।

(২৫) পিষানো গোলমরিচ বা পিষানো যোয়ান মিশিয়ে গরম করা তিলের তেল নাকে দিলে, গুঁকলে বা মালিশ করলে বন্ধ নাক খুলে যায়।

(২৬) মোম আর নুন মিশিয়ে গরম করা তিলের তেল লাগালে ফাটা গোড়ালিতে উপকার পাওয়া যায়।

(২৭) রাই, যোয়ান, শুঁঠ, রসুন বা হিং দিয়ে গরম করা তেল মালিশ করলে এবং তার সাথে গরম সেঁক দিলে জোড়ের [গাঁটের] ব্যথা কমে যায়। রিউমেটিজিম ছাড়া অন্য সন্ধি বাতে অনেক উপকার পাওয়া যায়। 

(২৮) তিল তেল একটু গরম করে রোজ মালিশ করলে এক মাসের মধ্যেই নিপ্রভ বা জৌলুষহীন ত্বকে উজ্জ্বলতা এসে যায়, সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়, চুলকুনি সেরে যায়।

(২৯) হিং আর শুঁঠের গুঁড়ো মিশিয়ে গরম করা তিল তেল মালিশ করলে কোমরের ব্যথা, জোড়ের ব্যথা, কোনো অঙ্গ আড়ষ্ঠ হয়ে যাওয়া, ইত্যাদি রোগের প্রশমন হয়।

(৩০)  তিলের তেলে রসুনের কোয়া দিয়ে গরম করে কানে দিলে কানের ব্যথা সেরে যায়।

(৩১) চুনের পানি থিতিয়ে নিয়ে তিলের তেল মিশিয়ে লাগালে আগুনে পোড়া ঘা সেরে যায়।

(৩২) পুড়ে যাওয়া অংশে শুধু গরম করা তিলের তেল মিশিয়ে লাগালেও চমৎকার ফল পাওয়া যায়।

 তিলের তেলের অসাধারন প্রয়োগ :

 নিয়মিত তিলের তেল প্রয়োগ করলে অনেক ক্ষেত্রে দেহের সুস্থতা লাভ হয়। তিল প্রয়োগের পদ্ধতি হল প্রতিদিন ভোরবেলা এক টেবিল চামচ কালো তিল অল্প অল্প করে মুখে দিয়ে মিহি করে চিবিয়ে যখন একেবারে রসের মতো হয়ে যাবে তখন গিলে ফেলতে হবে। এই ভাবে সব তিল চিবিয়ে খাওয়া হয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি খেতে হবে। এই তিল খাওয়ার পর তিন ঘন্টা পর্যন্ত আর কিছু খাবেন না। এই ভাবে তিল খাওয়ার সাথে সাথে যদি তেলের মালিশও করা যায় তাহলে যিনি খুব রোগা তিনি মোটা হয়ে যাবেন আর যিনি খুব বেশি মোটা তাঁর অত্যধিক মেদ কমে গিয়ে সঠিক আকার হবে। 

 বায়ু ও কফের কারণে যাঁর শরীরের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গেছে তাঁরও তিল প্রয়োগের দ্বারা শারীরিক বৃদ্ধি আবার শুরু হয়ে যায়। খিদে পায়, দাঁত যদি দুর্বল হয় তাহলে মজবুত হয়ে যায়। যাঁর অকালে চুল পেঁকে গেছে তিনিও তিল প্রয়োগের দ্বারা লাভবান হবেন। শরীর কান্তিমান ও তেজস্বী হয় সব ইন্দ্রিয়ের শক্তি বেড়ে যায়। যে সব মেয়েদের চুল উঠে যাচ্ছে তাঁদের চুল পড়া বন্ধ হয়, চুল ঘন কালো হয়। ঋতুস্রাব পরিষ্কার হয়। যদি এক টেবিল চামচ পরিমাণ বেশি মনে হয় তাহলে অর্ধ টেবিল চামচ করে সকালে ও সন্ধেবেলা যে রকম সহ্য হয় সেই রকম ভাবে ‘তিল প্রয়োগ’ করে দেখুন। বলা হয়ে থাকে যাঁরা এক বছর ধরে প্রতিদিন নিয়মিত ‘তিল প্রয়োগ’ করছেন তাঁদের যৌবন স্থির হয়ে যায়, বৃদ্ধেরাও যেন নব যৌবন ফিরে পান এবং মৃত্যু পর্যন্ত সক্ষম এবং সুন্দর থাকেন। 

 তিলের মতো তিলের তেলও উপকারী। তিলের তেল ভারী, বলপ্রদ, শরীরের রং উজ্জ্বল করে, মল নিষ্কষণ করে, মৈথুন শক্তিবৃদ্ধি করে, স্বচ্ছ, রস তথা পাকে মধুর, সূক্ষ্ম, কটু, বায়ু ও কফ দূর করে, উষ্ণবীর্য, স্পর্শে শীতল, পুষ্টিদায়ক, শরীরের দোষ দূর করে, মল ও মূত্র নিয়ন্ত্রণ করে, গর্ভাশয় পরিষ্কার করে, খিদে বাড়ায়, বুদ্ধিবৃদ্ধি করে, পবিত্রভাব, পুরো শরীরে তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ে, ব্রণ, ডায়বেটিস সরিয়ে দেয়, কানের ব্যথা, মস্তিষ্ক বেদনা, যোনির ব্যাথা দূর করে, শরীরে মাখলে শরীর হালকা হয়, ত্বক, চুল এবং  চোখের পক্ষে হিতকর। নানা রকমের, ক্ষত, আঘাত, পুড়ে যাওয়া, মাড়িয়ে যাওয়া, ভেঙ্গে যাওয়া ইত্যাদিতে তিলের তেল অত্যন্ত উপকারী। এই তেল নাকেও দেওয়া যায়, ভাল করে মেখে স্নানও করা যায় এমনকি কাজল তৈরি করে চোখে পরাও যায়-সবেতেই তিলের তেল সমান উপকারী।

 চরকের মতো তিলের তেল বল বৃদ্ধি করে, ত্বকের পক্ষে ভাল, গরম, স্থিরতা প্রদান করে এবং যোনি শোধ। এক কথায় বলা যায় তিলের তেল দেহের বিভিন্ন উপকার সাধন করে থাকে। তাই আমাদের নিয়মিত তিল খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত।

  (আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।)

0 Post a Comment:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন