শীতে রোদ পোহালে কি কি উপকার পাওয়া যায় ?.
শীতে রোদ পোহালে কি কি উপকার পাওয়া যায় ?.
প্রাচীনকাল থেকেই সূর্যের আলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য জাদুকরী একটি উপায়। সূর্যের আলো মানুষের দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ডি তৈরি করে। সূর্যের আলো হচ্ছে ভিটামিন ডির প্রথম ও প্রধান উৎস।
ভিটামিন ডির অভাবে বিশ্বের ৪৫ থেকে ৭৫ শতাংশ মানুষ ভুগছে। যার ফলে যে কেবল হাড় ক্ষয়, ব্যথা-বেদনা ইত্যাদি হতে পারে তা নয়, বলা হচ্ছে যে এ কারণে বাড়তে পারে হৃদ্রোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, ক্যানসার এবং আরও কিছু গুরুতর রোগের ঝুঁকি। ভিটামিন ডি বিনা পয়সায় পাওয়া যায় সূর্যের আলো থেকে প্রায় ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ । ত্বকের মাধ্যমে শোষণ হয় সেগুলো। তাই প্রতিদিন অন্তত ২০ মিনিট রোদে থাকতে পারলে শরীরের দরকারি ৪০ শতাংশ ভিটামিন ডি শোষিত হয় ত্বকে।
শরীরে প্রতিদিন রোদ লাগানো দরকার। কেননা অতিরিক্ত অতিবেগুনি রশ্মিও খারাপ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, শ্বেতাঙ্গদের জন্য দৈনিক অন্তত ১৫ মিনিট সূর্যের আলো মাখা উচিত, তবে শ্যামবর্ণদের জন্য আরেকটু বেশি হলেই ভালো। আমাদের দেশে বিরতি দিয়ে অন্তত ৩০ মিনিট গায়ে রোদ লাগানো দরকার।বর্তমানে বেশিরভাগ সময় আমাদের ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যেই কাটে। ফলে সূর্যের আলো গায়ে লাগার প্রশ্নই নেই।
তবে জানেন, দিনে মাত্র আধ ঘণ্টা ত্বকে সূর্যের আলো লাগাতে পারলেই মিলতে পারে নানান সমস্যা থেকে মুক্তি।শীতে রোদে দাঁড়াতে পারলে শরীরে নানান উপকার মিলতে পারে। সূর্যের আলোয় দাঁড়ানোর প্রথম উপকার হল শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি হওয়া।
ভিটামিন ডি আমাদের হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। হাড় মজবুত করে। তাই যারা বাতের ব্যথা বা আর্থ্রাইটিসের সমস্যায় ভুগছেন তাঁরা অবশ্যই সূর্যের আলোয় দাঁড়াবেন।এই ভিটামিন শরীরে এনার্জি বুস্টিং হর্মোন বাড়ায়।
সেই হরমোন আবার বাড়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তাই ইমিউনিটি বাড়াতে চাইলেও অবশ্যই সূর্যের আলোয় দাঁড়াতে হবে।সূর্যের আলোয় উপস্থিত নাইট্রিক অক্সাইড হল ভেসোডায়ালেটর।
এই উপাদান রক্ত চলাচল ভালো করতে সাহায্য করে।এই নাইট্রিক অক্সাইড ফেরাতে পারে শ্বাসপ্রশ্বাসের স্বাভাবিকতা। তাই অ্যাজমা বা অ্যালার্জি জাতীয় সমস্যা থাকলেও আপনার রোদে দাঁড়ানো উচিত।
এমনকী সূর্যের আলোয় দাঁড়ানোর কারণে ব্লাড সুগারও কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হয় বলে নানান গবেষণায় দেখা গিয়েছে।সূর্যের আলোয় উপস্থিত থাকে লাল রঙের ছটা। এই আলো আবার কোষের মাইটোকনড্রিয়ার উপর সুপ্রভাব বিস্তার করে। ফলে দেহের স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।
প্রকৃতিক আলো আমাদের মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটার যেমন সোরোটোনিন, মেলাটোনিন, ডোপামিন ক্ষরণ বাড়ায়। ফলে খোস মেজাজে থাকতে চাইলেও আপনি রোদে দাঁড়ান। দুশ্চিন্তা, অবসাদ ইত্যাদি দূর হবে।নীল ছটা গায়ে লাগলে আমরা জেগে থাকি।
এই আলো আমাদের মন ভালো থাকার কিছু হরমোন বের করতে পারে।বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বাইরে যারা সূর্যের আলোয় থাকেন তাদের ঘুম ভালো হয়। কারণ শরীরে বেরয় ঘুমে সাহায্যকারী হর্মোন। তাই অনিদ্রা কাটাতে চাইলেও বাইরে দাঁড়ান। সূর্যের আলো হাড় শক্তিশালী করে। ভিটামিন ডি এখানে একটি বড় ভূমিকা পালন করে, কারণ এটি দেহে ক্যালসিয়ামের আরও ভাল শোষণে সহায়তা করে এবং আপনার হাড়কে আগের চেয়ে শক্তিশালী করে তোলে।
ভিটামিন ডি চোখ ভালো রাখতে সাহায্য করে। মাত্র ৩০ মিনিটের জন্য রোদে দাঁড়িয়ে থাকুন তাহলেই যথেষ্ঠ। অ্যালঝেইমার হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে দেখা গেছে
যে উজ্জ্বল আলোর সংস্পর্শ অ্যালঝেইমার রোগীদের হতাশা এবং ভুলে যাওয়ার লক্ষণ কমায়।সূর্যের আলোয় যাওয়ারও নিয়ম রয়েছে। নইলে শরীর পুড়ে যাবে। এক্ষেত্রে সরাসরি সূর্যের আলোয় না দাঁড়িয়ে হাঁটতে পারেন। তাহলে রোদ কড়াভাবে গায়ে লাগবে না। তবে শীতের আদুরে রোদে অনায়াসে দাঁড়াতে পারেন। দিনে ৩০ মিনিট রোদে দাঁড়ান। তার বেশি নয়।
0 Post a Comment:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন