দীর্ঘজীবী হওয়ার ১৩টি বিজ্ঞানসম্মত উপায় কি কি ?.
বেশীরভাগ মানুষেরই ধারণা আয়ু নির্ভর করে জিন (gene) এর উপর। যাদের পূর্বপুরুষরা বেশীদিন বেঁচেছেন তাদেরও বেশীদিন বাঁচার সম্ভাবণা আছে। কিংবা যাদের পূর্ব পুরুষরা অকালে মৃত্যুবরণ করেছেন তাদেরও অকাল মৃত্যুর সম্ভাবণা বেশী। কিন্তু পুরাতন এই বিশ্বাস সত্যি নয়। আধুনিক বিজ্ঞানের মতে জিন মানুষের আয়ুর উপর খুব কমই প্রভাব ফেলে। বিজ্ঞানীদের মতে দীর্ঘায়ু লাভের চাবিকাঠি হচ্ছে স্বাস্থকর খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনধারা।
দীর্ঘজীবী হওয়ার ১৩টি বিজ্ঞানসম্মত উপায়-
১। অতিরিক্ত পানাহার বর্জন করুন-
গবেষণায় দেখা গেছে সাধারণ ক্যালরি গ্রহণ ১০-১৫% কমালে দীর্ঘায়ু লাভ করা যাবে। দীর্ঘজীবী মানুষের উপর পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে তারা সবাই কম ক্যালরির খাদ্য গ্রহণ করতেন, যার ফলে তারা দীর্ঘায়ু লাভ করে এবং রোগ বালাই এর ঝুঁকি কমে।
২। বেশী বেশী বাদাম খান-
বাদামে আছে প্রচুর পরিপোষক। প্রোটিন, ফাইবার, এন্টিঅক্সিডেন্ট, এবং দরকারি উদ্ভিজ্জ উপাদানে ভরপুর বাদাম। এছাড়া বাদামে আছে কপার, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, ফোলেট, নায়াসিন, এবং ভিটামিন বি-৬ এবং ভিটামিন এ।
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে বাদাম হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, প্রদাহ, ডায়াবেটিস, মেটাবলিক সিন্ড্রোম, পেটের চর্বি, এবং কয়েক ধরণের ক্যান্সার থেকে শরীরকে রক্ষা করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা সপ্তাহে অন্ততঃ ৩ দিন বাদাম খান তাদের অকাল মৃত্যুর হার ৩৯% কম।
৩। হলুদ-
বয়োবৃদ্ধি রোধে হলুদের চেয়ে ভাল ঔষধ আর নেই। হলুদের উপাদান কারকিউমিন একটি বায়োএক্টিভ কম্পাউন্ড। গবেষণায় দেখা গেছে কারকিউমিন আয়ু দীর্ঘায়িত করতে পারে।
৪। উদ্ভিজ্জ খাবার-
খাবার তালিকায় বেশী বেশী ফলমূল, শাকসব্জি, বাদাম ডাল, হোল গ্রেন, এবং বিন রাখলে তা রোগের ঝুঁকি কমায় এবং দীর্ঘজীবী হতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে শাকসব্জি জাতীয় খাবার বেশী খেলে অকাল মৃত্যুর সম্ভাবণা ১২-১৫% এবং ক্যান্সার বা হৃদরোগ থেকে মৃত্যুর ঝুঁকি ২৯-৫২% কমতে পারে।
৫। শারীরিক ক্রিয়াকলাপ-
এটা সবারই জানা যে নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ করলে স্বাস্থ্য ভাল থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে যারা সপ্তাহে অন্ততঃ দেড় ঘন্টা হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করেন তাদের অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি ২৮% কম এবং যারা এর বেশী ব্যায়াম করেন তাদের ঝুঁকি ৩৫% কম।
৬। ধূমপান বর্জন-
ধূমপান অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকাংশে বৃদ্ধি করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা ৩৫ বছর বয়সের মধ্যে ধূমপান ত্যাগ করেছেন তাদের আয়ু বেড়েছে ৮.৫ বছর এবং যারা ৬০ বছর বয়সের পর ধূমপান ছেড়েছেন তাদের আয়ু ৩.৭ বছর বেড়েছে।
৭। মদ্যপান-
মদ্যপান লিভারের ক্ষতি করে এবং সিরোসিস, হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। মদ্যাপানের অভ্যাস থাকলে তা কমাতে হবে এবং সবচেয়ে ভাল হয় এটা পরিহার করলে।
৮। সুখী থাকার চেষ্টা করুন-
সুখী মানুষ বেশীদিন বাঁচে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা ২২ বছর বয়সে নিজেক অত্যন্ত সুখী মনে করেন তাদের আগামী ৬০ বছর বাঁচার সম্ভাবণা অন্যান্যদের তুলনায় আড়াই গুণ বেশী।
৯। মানসিক চাপ দূর করুন-
মানসিক চাপ ও উদ্বেগ আয়ু হ্রাস করে। গবেষণায় দেখা গেছে হতাশাবাদী মানুষদের অকাল মৃত্যুর সম্ভাবণা আশাবাদী মানুষদের তুলনায় ৪২% বেশী।
১০। সামাজিকতা বজায় রাখুন-
বিজ্ঞানীরা বলেন, নিয়মিত সামাজিকতা বজায় রাখলে দীর্ঘজীবী হওয়ার সম্ভাবণা ৫০% বেশী। গবেষণা মতে শুধু ৩টি সামাজিক বন্ধনই আপনার অকাল মৃত্যুর সম্ভাবণা ২০০% কমাতে পারে।
১১। বিবেকবান হোন-
গবেষণায় দেখা গেছে যারা ছোটবেলা থেকেই গোছানো এবং শৃঙ্খলা পূর্ণ জীবন যাপন করে তারা অন্যান্যদের তুলনায় ১১% বেশী সময় বাঁচে।
১২। নিয়মিত কফি বা চা পান-
চা ও কফি উভয়ই ক্রনিক রোগের ঝুঁকি কমায়। গ্রিন টি’তে থাকা ক্যাটেচিন নামক পলিফেনল ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। গবেষণায় দেখা গেছে কফি পান টাইপ ২ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যয়ান্সার, এবং আলযহাইমার্স ও পার্কিনসন্স রোগের ঝুঁকি কমায়।
১৩। স্বাস্থ্যসম্মত ঘুমানোর অভ্যাস-
গবেষণায় দেখা গেছে দীর্ঘায়ুর সাথে ভাল ঘুমের একটি যোগসূত্র আছে। সময়মত ঘুমাতে যাওয়া এবং একই সময়ে সব সময় জেগে উঠার অভ্যাস স্বাস্থ রক্ষায় অপরিহার্য। অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে রাতে ৫-৭ ঘন্টার কম ঘুমালে অকাল মৃত্যুর সম্ভাবণা ১২% বৃদ্ধি পায়, এবং একই সাথে ৮-৯ ঘন্টার বেশী ঘুমালে আয়ু ৩৮% কমতে পারে।
আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।